মো.জাকির হোসেন :
এক মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী’র চানাচুর অন্য শিক্ষার্থীরা চুরি করে খাওয়ার অপরাধে ওই মাদ্রাসার সভাপতি ও শিক্ষকরা মিলে ৫০-৬০জন শিক্ষার্থীকে (হেড-ডাইন) মাথা নিচে পা উপড়ে করে আধা ঘন্টা শাস্তি দেওয়ায় ২০-২৫জন শিক্ষার্থী’র বমি ও নাকে-মুখে দিয়ে রক্ত বের হয়ে এবং মাথায় রক্ত চড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ সময় অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের শোর-চিৎকারে আশে-পাশের লোকজন এগিয়ে এসে সেবা শুশ্রুষা করে। স্থানীয় লোকজন মারমুখী হয়ে ওই মাদ্রাসাটি ঘেরাও করে ফেলে।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে এবং অভিযুক্ত মাদ্রাসা’র সভাপতিসহ ৪ শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে, সোমবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শংকুচাইল আশ্রাফুল উলুম হাফেজিয়া নুরানীয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। রাতে বুড়িচং থানার ওসি মোঃ মোজাম্মেল হক পিপিএম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনারস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধার করে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লার মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর পিতা মোঃ ফিরোজ মিয়া (৩৮) বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
মামলার বিবরণে ও পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইল আশ্রাফুল উলুম হাফেজিয়া নুরানীয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার এক শিক্ষার্থী ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার বাগড়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আল-আমিন (১০) কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে তার মায়ের সঙ্গে সোমবার বিকাল ৪.৩০ টায় মাদ্রাসায় এসে যোগদান করে।
এ সময় আল-আমিনের মা একটি চানাচুরের প্যাকেট তার পুত্রকে কিনে দেয়। আল-আমিন তার মাকে রাস্তায় এগিয়ে দিয়ে এসে দেখতে পায় মায়ের দেওয়া চানাচুরের প্যাকেটটি কে যেন নিয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তার মাকে ফোন করে জানালে তিনি রাস্তা থেকে ফিরে আসেন এবং মাদ্রাসার সভাপতি ও শিক্ষকদেরকে জানান।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় মাদ্রাসার সভাপতি ও শিক্ষকগণ চানাচুর চুরি করার অপরাধে ৫০-৬০ জন কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদেরকে (হেড-ডাউন) মাথা নিচে পা উপড়ে করে আধা ঘন্টা শাস্তি দেওয়া হয়। এ সময় ২০-২৫জন শিশু শিক্ষার্থী তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন অনেক শিক্ষার্থীর মুখ দিয়ে রক্ত-বমি-বমি-মাথায় রক্ত চড়ে যায় এবং ঝিমুনি এসে যায়। শিক্ষার্থীদের শোর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় জনগণ মাদ্রাসার সামনে এসে জোড় হয় এবং উত্তেজিত হয়ে মারমুখী অবস্থানে দাঁড়ায়।
খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেযারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তফা পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে এবং বুড়িচং থানা পুলিশকে খবর দেন। এসময় বুড়িচং থানার ওসি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন পিপিএমের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনারস্থলে পৌঁছে অসুস্থ শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধার করে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে।
রাতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং ৪ শিক্ষক সহ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় অসুস্থ এক শিশু শিক্ষার্থীর পিতা ফিরোজ মিয়া বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে সোমবার রাতে বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের করে। মঙ্গলবার সকালে বুড়িচং থানা পুলিশ আটক ৪ জনকে কুমিল্লা কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
আসামীরা হলো মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ বাদশা মিয়া (৭০), শিক্ষক মোঃ মোতালেব (৩৫), শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান (৩৫) ও হাফেজ মোঃ সফিকুল ইসলাম।
অসুস্থ শিক্ষার্থীরা হলোঃ- ইসমাইল হোসেন বাধন (১০), এনায়েত (১০), হিফজুল করিম (৮), মোঃ আশ্রাফুল (১০), সাকিব (১২), মোঃ আশিকুর রহমান (১১), রুহুল আমিন (৯), জুনায়েদ (১০), সাইফুল ইসলাম (৯), মোঃ সিফাত (৯) ও মোঃ ছাব্বির (১০)।
এ ব্যাপারে, বুড়িচং থানার ওসি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন পিপিএম জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধার করে আমাদের গাড়ি দিয়ে বুড়িচং এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। রাতে অভিযুক্ত ৪ জনকে আটক করে থানায় আনা হয়, তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়। মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে কোর্টের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়।